ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম দুর্ঘটনা, একটি ভিন্ন প্রকৃতির পুঁজিবাদ !

(llcobangla.org)
ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম তৈলের রিগ বিস্ফোরনের এক মাস পর ও মেক্সিকো সাগরে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল তৈল নির্গত হয়েছে। ওবামা প্রশাসন এবং ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম উভয় কর্তৃ পক্ষের কেহই সমস্যার সমাধানে তেমন গা করেন নি। এই সমস্যা এক সময় নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যায়, এখন একে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের ইতিহাসে ভয়াবহ তম পরিবেশগত দুর্ঘটনা হিসাবে বর্ননা করা হয়। এই দুর্ঘটনায় অনুমান করা হয় যে এ পর্যন্ত কোম্পানীর প্রায় ৩৬০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। তবে মানবিক ও পরিবেশগত ক্ষতির পরিমান অনেক অনেক বেশী হবে। এই দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়া আরো অনেক দূর পর্যন্ত গড়াবে বলেই ধারনা করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে যে তৈল নির্গত হচ্ছে তা ইতিমধ্যে লুসিয়ানা পর্যন্ত পৌছে গেছে, ইহা ফ্লোরিডা এবং কিঊবার জন্য হুমকী সৃষ্টি করেছে। মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের পরিবেশ দুষন, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বকে বিষাক্ত করে চলেছে। সেখানকার মানুষের জীবন যাত্রা হুমকীর মূখে ঠেলে দিচ্ছে। ধারনা করা হচ্ছে, এই নির্গত তৈলের প্রভাবে ইহা সমগ্র অঞ্চলকে প্রভাবিত করবে। এমনিতেই, তৃতীয় বিশ্বের মানুষ কঠিন ভাবে জীবন যাত্রা নির্বাহ করে থাকেন, এখন এই দুর্ঘটনা তা ও বাঁধা গ্রস্থ করবে হয়ত তার জন্য তারা কোন  প্রকার ক্ষতি পুরন ও পাবেন না ।
এই ধরনের দুর্ঘটনা পুঁজিবাদ ঘটাবে এটা অস্বাভাবিক নয়। যদিও অনেক বিকল্প জ্বালানীর উৎস ইতিমধ্যেই আবিষ্কৃত হয়েছে কিন্তু পুজিবাদিরা প্রতিনিয়ত তৈলের ব্যবহার বৃদ্বির কাজ করেই যাচ্ছেন। ইহার প্রধান কারণ হলো পুঁজিবাদ মানুষের উপর থেকে কেবল মুনাফাই অর্জন করতে চায়। পুঁজিবাদের সকল অভিযানের মূলে থাকে কেবলই লাভ করা, তাঁদের এই সীমাহীন মুনাফা লাভের প্রত্যাশা দুনিয়ার সর্বত্র পরিবেশগত দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে দেখা দিয়েছে। জল বায়ুর উষ্ণতা, সমূদ্রে মৃত্যুপুরী, প্রজাতির বিলুপ্তি ইত্যাদী প্রতিদিন বেড়েই চলেছে।পুঁজিবাদ নিজেই একটি সমস্যা, এটা পরিবেশগত সমস্যার সমাধান করতে অক্ষম। পুঁজিবাদ আমাদের প্রীয় পৃথিবীকে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাদের এই ধরনের ব্যবসা বানিজ্য যতদিন চলবে ততদিন ই এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে থাকবে।
পুঁজিবাদ এমন একটি বিশ্ব ব্যবস্থা তৈরী করেছে যেখানে কতিপয় দেশ স্বাভাবিক ভাবেই শোষণ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে দুনিয়ার বেশীর ভাগ মানুষের সম্পদ লুটে নিয়ে নিজেদেরকে ধনি হিসাবে গড়ে তুলবে। আর বেশীর ভাগ দেশ দরিদ্র বা অতিদরিদ্র ই থেকে যাবে। প্রথম বিশ্বের অস্থিত্ব ই আজ আমাদের জন্য বিশাল সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। তাঁদের জনগণের জীবন মান বজায় রাখার জন্য তারা যা যা  করা দরকার তারা তাই করবেন। তাই তাঁদের উপস্থিতি আমাদের মানুষ ও পরিবেশ নিরাপদ নয়। তৃতীয় বিশ্বের তুলনায় এখন প্রথম বিশ্ব অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ, এখন প্রথম বিশ্বে আর উৎপাদনের কেন্দ্র স্থাপন করা হয় না। তারা এখন তৃতীয় বিশ্বের দেশ সমূহে উতপাদনের জন্য কল কারখানা স্থাপন করছেন। ফলে পরিবেশ দুষনজনিত সকল বিশাক্ততা তাদেরকে গ্রাস করছে। প্রথম বিশ্বের সকল দুষন বর্জের বোঝা বজন করছে তৃতীয় বিশ্বের মানুষ। ভোগ করছেন প্রথম বিশ্বের মানুষেরা আর মূল্য দিচ্ছেন দরিদ্র দেশের সাধারণ জনগণ। পুঁজিবাদ ও প্রথম বিশ্বের ঠিকে থাকা আমাদের এই সুন্দর প্রথিবীর জন্য মানানসই নয়। আর সেই কারনেই দুনিয়ার মানচিত্র থেকে প্রথম বিশ্ব ও পুজিবাদকে নির্মূল করা দরকার। আমাদের বাচার তাগিদেই বিপ্লব করা অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। 
আমরা কি ধরেন বিপ্লব চাই ?
পুঁজিবাদের আওতায় ইতিবাচক ভাবে সমাজকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। আবার তাকে আদিম সাম্যবাদী আদলে ফিরিয়ে  নেয়া ও সম্ভব নয়, এই ধরেন চিন্তা ভাবনা ও অবাস্তব। ইহা কেবল মাত্র প্রধান দ্বন্দ্ব সাম্রাজ্যবাদ ও নিপিড়িত জাতি সমূহের মাঝে যে দ্বন্দ্ব তার সমাধানের ভেতর দিয়ে অন্যান্য সমস্যা গুলো ও সমাধান করা যেতে পারে। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে শোষিত জাতি সমূহের লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে সামাজিক শক্তি সমূহে জাগরিত করে পরিবেশগত বিপ্লব সাধন করা সম্ভব। বিগত অর্ধ শতাব্দী জোড়ে আমরা  তাই দেখে আসছি বার বার।
মানুষের মৌলিক বিষয় গুলো অর্জনের জন্য বাস্তব সম্মত পথ হলো- পরিবেশ গত পরিবর্তনের জন্য সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করা এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। তারপর প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব প্রতিস্টার মাধ্যমে সামাজিক ও পরিবেশিক বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এ যুগে সাম্যবাদে উপনিত হবার উপযুক্ত পথ হলো লিডিং লাইট। কেননা লিডিং লাইট হলো সত্যিকার পরিবেশবাদি। কোন আন্দোলনই লিডিং লাইটের চেয়ে বেশী সবুজ নয়। যারা এখন পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন  তাঁদের উচিৎ বিশ্ব জনযুদ্বের প্রতি সমর্থন জানানো। প্রথম বিশ্ববাদের বিরুদ্বে লিডিং লাইট হলো প্রাগ্রসর বিপ্লবী বাহিনী । এই বাহিনী ই দুনিয়াকে বদলে দিতে পারে।
অতীতে, বিপ্লবীগন সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে পরিবেশগত বিষয় আসয় তেমন ভাবে বুঝেন নি। ফলে তা গুরুত্ব ও কম পেয়েছে। তাই পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে সমাজতান্ত্রিকদের মিশ্র ভূমিকা দেখা গেছে। সমাজতান্ত্রিক সমাজের যেমন সফলতা আছে তেমনি ব্যার্থতা ও আছে। অনেকটা পুজিবাদিদের মতই তাদের ও উৎপাদন মূখী প্রবনতার কারনে অনেক কর্ম প্রকৃতি বিরোধী হিসাবে গন্য হয়ে থাকবে। এই দৃষ্টি ভংগী ব্যাপক ভাবে উৎপাদন বৃদ্বি করেছে। প্রকৃতির উপর নিয়ন্ত্রন কায়েম করেছে। তারা একে মানবিক আনন্দের উৎস হিসাবে দেখেছেন। এই দৃষ্টি ভংগীটা ছিলো সংশোধনবাদের দ্বারা প্রভাবিত। তারা উৎপাদন শক্তির বিকাশ, বিশেষ করে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে বেশী নজর দিয়েছেন। ‘উৎপাদন শক্তির বিকাশ’ এই তত্ত্বের পেছনে প্রথম বিশ্ববাদের প্রভাব বিশেষ ভাবে লক্ষ্যনীয়, অনেকে এমন ও বলেন যে প্রথম বিশ্বের প্রলেতারিয়েত শ্রেণী না কি বিদ্যমান। লিডিং লাইট এইধরনের তত্ত্বকে অস্বীকার করে। এবং এই ধারনা ও পোষন করে যে, মানুষের সুখ শান্তি প্রকৃতির উপর প্রভুত্ব করার মাঝে নয় বরং মানব সমাজ ও প্রকৃতির একটি অংশ। ইহা প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়। আমরা আরো মনে করি যে, প্রকৃতির সুরক্ষা প্রদান করা, টেকসই বিশ্ব গঠন করা সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মানের একটি বিরাট কাজ। টেকসই বিশ্ব গঠনের জন্য, প্রকৃতিকে সুরক্ষা দান করার জন্য, সামগ্রীক ভাবে মানুষ ও অন্যান্য প্রানীদের নিরাপদ আবাস তৈরী করার জন্য – প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব কায়েম করার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। কেবল ইহা ই আমাদের পরিবেশকে বাঁচাতে পারে। #শিহাব