পুস্তক পর্যালোচনাঃ হিটলার’স বেনিফিসিয়ারী (২০০৫) লিখেছেন- গটজ এলি

alyপুস্তক পর্যালোচনাঃ হিটলারস বেনিফিসিয়ারী (২০০৫) লিখেছেনগটজ এলি

গটজ এলির হিটলারস বেনিফিসিয়ারী বইটি একটি দুনিয়া কাঁপানো গ্রন্থ। এলি প্রচলিত সকল প্রহেলিকা ভেদ করে হিটলারের সকল কর্ম কান্ডের চিত্র তুলে ধরেছেন। এমন কি এই বইতে তিনি ট্রটস্কিবাদি, মার্ক্সলেনিনবাদি সহ সকলের ধ্যান ধারনায় প্রচন্ড আঘাত হেনেছেন। তিনি দেখিয়ে দিলেন যে হিটলারের প্রশাসন কেবল শ্রমিকদের মজুরীর উপরে ঠিকে থাকার কথা নয়। কারন এরা ক্ষমতায় ঠিকে ছিলো তাদের প্রতি সাধারন মানুষের সমর্থন ছিলো। এমন কি যুদ্বে হেরে যাবার পর ও জার্মানীতে হিটলারের প্রতি জনতার প্রচুর সমর্থন ছিলোঃ

সুনির্দিস্ট ভাবে দেখলে স্বীকার করতেই হবে যে, অনেক জার্মান নাজিদের লুন্ঠনের অংশীদার ছিল, কেবল একটি ক্ষুদ্র অংশই এর বিরুধিতা করে। সেখানে এমন এক পরিস্থিতির সৃস্টি হয়েছিলো যে, সেই ক্ষুদ্র জনগুষ্টি টি কে নাজিদের সামনে অসহায় করে দেয়। নাজিরা একটি কল্যান রাস্ট্রে নামে জাতিগত নিপিড়নের পথ বেঁচে নেয়, এরা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের মধ্যমে গনহত্যা করে বহু পরিবারকে নির্মূল করে দেয়। জার্মান জাতীয়তা নিয়ে নানা প্রকারের গৌরব ময় গল্প তৈরী করে।()

এলি ব্যাখ্যা করে দেখালেন কেমন করে একটি ফ্যাসিবাদি সরকার সাধারন মানুষের জীবন মান উন্নত করে সাম্রাজ্যবাদের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। এই প্রক্রিয়ায় সরকার হয়ে উঠে জনপ্রিয় আর সেখানে প্রতিরোধের মাত্রা ক্রমে কমতে থাকে। এই নীতির কারনে অনেক আলোকিত মানুষ ও নিথর হয়ে পড়েন। নাজি নিতি নির্ধারকগন এটা খুব ভালো করেই জানতেন যে, সাম্রাজ্যবাদি কার্যক্রমের সাথে স্থানীয় মানুষের উন্নতি ও সামাজিক শান্তি নিশ্চিত করা কত জরুরী বিষয়। তাই তাঁরা তাদের লুন্ঠন ও শোষণ কর্মে জার্মান সাধারন মানুষকে যুক্ত করে নেয়। আর এই জন্যই আজকের প্রথম বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বের সম্পর্কের বিষয়টি বুঝতে হলে এলি র বইটি পড়া দরকার। সাধারন ভাবে একজন জার্মান যা পাওয়ার কথা কিন্তু তাদের বিজয়ের সাথে সাথে তার পরিমান বেড়ে যেতে থাকে। যেমন এখন প্রথম বিশ্বের প্রচলিত ব্যবস্থার কারনে তাদের জনগণ ও শ্রমিক শ্রেনী অনেক বেশী পাচ্ছেন। জার্মান আগ্রাসী চক্র যে নীতির মাধ্যমে আগ্রাসন শুরু করেছিলো আজ সেই নীতিই অনুসরন করছেন প্রথম বিশ্বের নীতি নির্ধারক চক্র। যারা সমাজ পরিবর্তনের জন্য সাম্রাজ্যবাদকে বুঝতে চান তাদেরকে বলব গটজ এলির বইটি পড়ুন।

জনপ্রিয়তা ও বিপ্লবী তারুন্য

“নাজি” শব্দটি অনেকেই এড়িয়ে চলেন। এই শব্দটি সকল সময়ে আমাদের সামনে একটা নিস্টুরতা ও একনায়কত্বের ছবি তুলে ধরে। যদি নাজি শাসন নিস্টুরতা, একনায়কত্বের ও নিপীড়কের শাসন কিন্তু তা সকল জার্মান নাগরীকের নিকট একেই ভাবে বিবেচিত হয় না । বেশীর ভাগ জর্মান ই এতাকে খারাপ হিসাবে চিন্তাই করেন না। এলির মতেঃ

“ ধনিক গুষ্টির উপর একনায়কত্ব জোর করে কিছুই চাপাতে চায়নি। তাঁরা যদিও জার্মানীতে একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃস্টি করেছিলো কিন্তু ধনীদের বিষয়ে খুবই সতর্ক ছিলো। সম্পদের সঞ্চালন ও ভোগীদের উপকরন সরবরাহের ক্ষেত্রে কোন প্রকার কমতি রাখে নাই। রাষ্ট্র তাদের প্রয়োজনে নিজস্ব কার্যক্রম বদল করেছে”।(২৫)

এলি সেই প্রশাসনের আরো একটি চমৎকার চিত্র তোলে ধরেছেন, তিনি জার্মানদের বাস্তব অভিজ্ঞতা বর্ননা করেছেন। তাঁর পর্যবেক্ষন হলো, হিটলারের শাসন ছিলো বিপ্লবী তরুণদের নিকট খুবই জন প্রিয় এক টি বিষয়। এতে ছিলো নতুনত্বের চর্চা, পুরাতনের বর্জন আর স্থবিরতার উচ্ছেদ। সেই প্রশাসনকে দেখা হয় নতুন ও ভিন্ন আঙ্গীকে। নাজিদের উত্থানকে তারুন্য স্বাগত জানায় । এটা ছিল তরুনদের জন্য এক মহান বিপ্লব। উদাহরন হলোঃ

“ ১৯৩৩ সালে হিটলার যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন জোসেফ গোয়েবলসের বয়স হল ৩৫, রেইনহার্ড হেইডরিচ ২৮; আলবার্ট স্পিয়ার ২৭; এডলফ এইখম্যান ২৬ ; জোসেফ মেঙ্গল ২১; হেইনরিচ এবং ফ্রাঙ্ক উভয়ই ৩২ বছর বয়স। দলীয় পদে কেবল প্রবীন নেতা ছিলেন হারম্যান জর্জিং যার বয়স হয় তখন মাত্র ৪০ বছর”। (১৩-১৪)

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের পর জরিপ বলছে, সেই সময়কার জার্মানীর ক্ষমতাসীন দলের মধ্যম স্তরের নেতাদের বয়সের গড় ছিলো মাত্র ৩৪ বছর, আর সরকারের লোকদের বয়সের গড় ছিলো ৪৪ বছর।(১৪) নাজিদের নেতা ছিলেন সেই সময়কার বিশ্বের সকলের চেয়ে সব চেয়ে বয়সে ছোট রাষ্ট্র প্রধান। জার্মানরা ২০ থেকে ৩০ বছরের বয়সের লোকদের মানসিকতার উপর ভিত্তি করে দেশীয় নীতি প্রণয়ন করে। নাজিরা তারুন্য দিয়ে দুনিয়াকে দেখতে শুরু করে। জার্মান লোকেরা ও তারুন্যকে প্রসংসা করতে শুরু করে দেয়। এরা সাহসের পক্ষ নেয়। কোন আগ্রাসনকে এরা নিন্দা করতে ভূলে যানঃ

“ প্রায় সকল জার্মান তরুনরা জাতীয় সমাজতন্ত্রের নামে একনায়কত্ব, বাক স্বাধীনতায় নিয়ন্ত্রন ও নিপিড়নকে তাঁরা ইতিবাচক হিসাবে দেখতে শুরু করে। এটাকে এরা পরম স্বাধীনতা ও রুম্যান্টিক অভিযান হিসাবে দেখে”।(১৪)

এমন কি যুদ্ব চলা কালিন সময়ে ও হিটলারের সরকার প্রবল ভাবে জনপ্রিয় ছিলোঃ

“ সেই সময়ে জার্মান নেতারা যুদ্বকালিন এক প্রকারের সমাজতন্ত্রের সৃজন করেন যা তাদের অধস্থনদেরকে নিয়ন্ত্রন করা যায়”।(৫৩)

তাদের প্রশাসন ছিলো প্রচন্ড ভাবে রক্ষনশীল, এবং নানা ভাবে জার্মান নাগরীকদেরকে বিভাজন থেকে দূরে রাখে। ঐতিহ্যগত ভাবে ও জার্মান সমাজে নানা প্রকার সামাজিক বৈষম্য বিদ্যমান ছিলো। তারুন্য যখন দেখলো দেশে এক নয়া ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে সামাজিক ব্যবধান তিরুহিত হচ্ছে, তা তাদেরকে মারাত্মক ভাবে উৎসাহিত করে তুলে। প্রসাশন জার্মান সমাজে প্রথমিক ভাবে শান্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে। সেই শান্তি রক্ষার জন্য জনগণকে তেমন কোন মূল্য ও পরিশোধ করতে হয়নি। আদর্শগত ভাবে জার্মানদের মাঝে কোন প্রকার ব্যবধান থাকুক তা নাজিরা চায়নি। তা এরা সাম্যবাদি ভাবধারা থেকেই গ্রহন করে। যাকে এরা জাতীয় সমাজতন্ত্র নামে অভিহিত করে। যদি ও সত্যিকার অর্থে নাজিদের সমাজে সাম্যবাদের কোন কিছুই চর্চায় ছিলো না । তাঁরা জাতীয় সমাতন্ত্রের কথা বলে আন্তর্জাতিকতার উপর জোর দেয়। সত্যিকার সমাজতন্ত্রে কেবল একটি জাতির শ্রমিক শ্রেনীর মুক্তি আসতে পারে না । সত্যিকার সমাজতন্ত্র প্রলেতারিয়েতের মুক্তির নিশ্চয়তা দেয়, আন্তর্জাতিক বিপ্লবের কাজে সহায়তা করে। সত্যিকার সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদে জাতিয়তাবাদের কোন স্থান নেই।

ঋন গ্রহন, কর আরোপ ও এরিয়ানাইজেশন

নাজি চক্র ক্ষমতায় আরোহনের পরই ব্যাপক হারে নানা উৎস থেকে ঋন গ্রহন শুরু করে দেয়। তাঁরা যুদ্বের প্রস্তুতি হিসাবে বিপুল হারে অস্ত্র ক্রয় শুরু করে কিন্তু তার মাশুল গুনতে হয় জার্মানীর সাধারন মানুষকে। নাজিরা শক্ত হাতে সামাজিক শান্তি ঠিক রাখার ব্যবস্থা গ্রহন করে। প্রথম বিশ্ব যুদ্বের সময় ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত জার্মানীর লোকদের জীবন মানের অবস্থা প্রায় ৬৫% নিচে নেমে গিয়েছিলো। কিন্তু পর্বতীতে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের কালে আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়।(৩৫) ১৯৩৯ সালে নাজিরাঃ “ মানুষের জীবন যাত্রার মান সঠিক রাখার জন্য এবং জার্মান পরিবার সমূহের সমর্থন ধরে রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করে”(৬৯)। নাজিরা তাদের পরিকল্পনায় “ সামাজিক ন্যায্যতা বজায় রাখার জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করে”। যুদ্বের পরে ও আগের পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে তার জন্য ব্যবস্থা নেয়। নাজিরা সে কাজ টি সুস্টু ভাবে করার জন্য তাদের কর ব্যবস্থার সংস্কার করে নেয়, তাঁরা সাধারন মানুষের উপর কম ও ধনীদের উপর অধিক কর আরোপ করে।(৫৫) নাজি প্রশাসকগন কোন অবস্থাতেই সাধারন জার্মান জনগণের সমর্থন হারাতে চান নাই ।(৫০) আওয়াম জনতার সমর্থন ধরে রাখার জন্য এরা প্রগতিশীল এক কর ব্যবস্থা চালু করে । ১৯৪৩ সালে নাজিদের এক প্রতিবেদনে তা নিয়ে সন্তোষ জনক মন্তব্য প্রকাশ করে- “ জনগন তাদের আর্থিক চাহিদা পুরন করতে পারছেন, তাদের ঋনের জামানত পরিশোধ করতে পারছে, এবং কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ঋন নিয়ে যারা দিতে পারছেন না তাদেরকে যেন চাপে ফেলা না হয়”।(৫৮) কৃষকদের ঋন মকুফ করে দেয়া হয় এবং আরো অধিক মাত্রায় ঋন দেবার ব্যবস্থা করে।(৫৫) নাজিরা ধনীদের উপর আরো অধিক মাত্রায় কর আরোপ করে। “ ব্যবসায় ও বানিজ্যে কিছু টা ঝাকুনী খেলেও ১৯৪২-৪৩ অর্থ বছরে তাঁরা ব্যাপক ভাবে লাভবান হয়। (৬২) হিটলার “পরিশ্রম বিহীনআয়” শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ কারীদের উপর অধিক মাত্রায় কর আরোপ করে। (৬৫) শিপ্লপতিগন দাবী করেন যে, ১৯৪৩ সালে নাকি ৮০ -৯০% ব্যবসার বিকাশ হয়েছে। আসলে এটা ছিলো নাজিদের প্রভাবিত বক্তব্য। এরা বাড়িয়ে বলেছেন এটা প্রামান করার জন্য যে তাদের সমাজে ব্যাপক শান্তি বজায় আছে।(৬৮)

নাজিরা তাদের নিজেদের সামাজিক শান্তি বজায় রাখার জন্য ব্যাপক ভাবে সমাজ কল্যাণ মূলক কর্মসূচি গ্রহন করে। তারা ব্যাক্তিগত ভাবে মানুষকে নগদ টাকা পয়সা দিতে শুরু করে। তাঁরা আহবান জানালেন, “ কায়িক ও মেধাভিত্তিক শ্রমিকদের মধ্যে যেন কোন প্রকার ব্যবধান করা না হয়- সকলকে একেই কাতারে দাঁড়াতে বলেন”। সকলের মাঝে সম্প্রতি বজায় রাখার জন্য অনুরুধ করে। তাঁরা বললেন, “আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি দয়াশীল সমাজ বিনির্মান করার কাজ করছি। যেখানে প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের কল্যান হবে”। রাষ্ট্র সামাজিক শান্তি ও সামাজিক কল্যানের দায়িত্ব নিজ কাধে নিয়ে নেয়। তাঁরা নানা বিভাগের মাধ্যমে সরকার চালাতে থাকে। যেমন- পর্যাপ্ত বাজেট না থাকা সত্বে ও মার্টিন বুর্ম্যান, আলবার্ট স্পিয়ার, হেইন রিচ হিমলার, এবং খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রী হার্বার্ট বেক কে দায়িত্ব দেয়া হয় সাধারন জার্মানদেরকে পরিচালনা করার জন্য। এই কৌশলের প্রধান কারন ছিলো হিটলারকে সকল প্রকার বিতর্কের বাহিরে রাখা। (৫৭)

নাজিরা নিজেদেরকে অস্ত্র সমৃদ্ব করতে, যুদ্বের প্রস্তুতি নেয়া এবং সামাজিক শান্তি বজায় রাখতে ব্যাপক ঋন গ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং আর্থিক মহা সংকটের জন্ম দেয়। নাজিরা নিজেদের দেশ ও অন্যান্য দেশ থেকে ঋন গ্রহন করে। কিন্তু পরিস্থিতিগত কারনে এরা অস্ত্রের দিক থেকে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠে।কিন্তু তাদের মাথায় বিশাল ঋনের বোঝা চেপে বসে। এই ঋন ফেরত দেবার কোন ইচ্ছাই নাজিদের ছিলো না । (২৬৬) নাজি চক্র আর্থিক অবস্থা নিয়ে এক ধরনের অসত কৌশল অবলম্বন করে”।

এলি লিখেনঃ

“নাজিদের গৃহিত পদক্ষেপের কারনে জার্মানীর ধনীক চক্র তথা আবাসন প্রকল্পের মালিক, অলঙ্কার ব্যবসায়ীগন লাভবান হতে থাকেন। ইহুদিদেরকে উচ্ছেদের কারনে তখন অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। ইহুদি জাতির লোকেরা উপযক্ত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে তাদের দ্রব্যাদি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়”।(২৪৮)

সাশক চক্র ইহুদিদের ধন সম্পদ লুন্ঠিন করাকে বৈধতা দেয়। তা ও আবার সামাজিক গনতন্ত্রের নামে। এরা ক্রমে গণতন্ত্রের নামে দাশকে গনহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। সেই সময়কার স্বরাস্ট্রমন্ত্রী ইউলহেইম ঘোষনা করেনঃ

“ ইহুদিদের নিকট যে সম্পদ জমা আছে তা জার্মান জনগণের সম্পদ। এই সকল ধন সম্পদ নষ্ট করা বা মূল্য কমিয়ে দিলে তা জার্মান জনগণের ই ক্ষতি হবে”।(৪৫-৪৬)

ইহুদিদের সম্পদ বিক্রি বন্দ্ব করে দেয়া হয়। সেই সময়ে অর্থনৈতিক ইনফ্লেশন ও দেখা দেয়। ফলে সাধারন জার্মান নাগরিকদের উপর করের বোঝা ও চাপানো হয়। সম্পদের উপর নানা প্রকার নিয়ন্ত্রনের কারনে জার্মান উঁচু স্তরের নাগরিকদের বিলাশী জীবন সহজতর হয়ে উঠে। সম্পদের এরিয়ানাইজেশন করে জার্মানদের মাঝে সম্পদ লুন্ঠনের এক মহা সুযোগ তৈরী করে দেয়। ফলে সমগ্র ইউরূপে লুন্ঠনের ও দখল করার প্রবণতা জার্মানদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। (৪৬-৪৮)

যুদ্ব, দখল ও লুন্ঠন

যুদ্ব যখন উঁচু মাত্রায় উন্নিত হয়, তখন জার্মানীর লোকেরা খুবই উল্লষিত হয়ে উঠে। সেই সময়ে ইহুদিদের সম্পদ লুন্ঠন করে তাঁরা মহা উৎসবে মেতে উঠে। তাদের সামাজিক শান্তির বাতাস সদ্য দখল করা সমাজে ও ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে।

এলি লিখেনঃ

“ নাজিরা যখন ইতিহাসের সব চেয়ে ব্যায় বহুল লড়াইয়ে মত্ত্ব হলো তখন, জার্মানীরা লোকেরা সেই যুদ্বের খরচ বহন করতে চাইলেন না । হিটলার জার্মানদের উপর থেকে সেই খরচ না নেবার ঘোষণা দিলেন। তবে ইহুদিদের উপর উঁচু হারে কর আরোপ করলেন”। (৯)

“দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বকালিন সময়ে জার্মানী অভাবনীয় ভাবে অন্যান্য পরাজিত ইউরূপীয় দেশ সমূহের উপর লোক এবং বাধ্যতামূলক ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়। ফলে তাদের অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রার অর্জন দ্বিগুন হয়ে যায়”। (৭৭)

“ ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত সময়ে যুদ্বের খরচ বিদেশ থেকেই আসতে থাকে, এমন কি বিদেশীদের দিয়ে নিজেদের দেশের অনেক কাজ বিনা মুল্যে করিয়ে নেয়। বিদেশী লোকদেরকে দাসে পরিনত করে হিটলার। ইহুদিদেরকে নাজিরা রাষ্ট্রের শত্রু হিসাবে ঘোষণা করে দেয়। জার্মান সৈন্যদের সকল খরচ সরকার বহন করে”।(৭৯)

যে সকল এলাকা জার্মান বাহিনী দখলে নেয় তাদের উপর চলে নির্বিচার লুন্ঠন। লুন্ঠন করে নাজিরা নিজেদের তহবীল সংগ্রহ করে । জার্মানী অন্যদিকে নিজেদের নোটের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অন্যান্য দেশের উপর সুবিধা অর্জন করতে থাকে ।

লুণ্ঠন করে সম্পদ পাচার করা

জার্মানরা যেসকল দেশ দখল করে তাঁরা সেইসকল দেশের সম্পদ ব্যাপক ভাবে লুন্ঠন করতে শুরু করে দেয়। অধিকৃত দেশের সম্পদ লুন্ঠন করে সেই সম্পদ নিজ দেশে প্রেরন করতে থাকে। তাঁরা অধিকৃত দেশ সমূহের অর্থনীতিকে ধংস করে দেয়। তাদের লক্ষ্য হলো জার্মানদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে অধিকৃত দেশের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া । জার্মানরা নিজেদের জন্য বিলাশ দ্রব্য ক্রয় করে উন্নত জীবন যাপন করতে থাকে। লিখক এলি লিখেনঃ

“ আমার এখন ও মনে আছে কিছু সুন্দর জিনিষের কথা । যা আমার কিছু বন্দু ও আত্মীয়রা বিদেশ থেকে পাওয়া কিছু দ্রব্যের প্যাকেট আনন্দের সাথে খোলে ছিলো। তাঁরা খুবই খুশি ছিলেন তাদের প্রতি যারা এই সকল প্যাকেট তাদেরকে পাঠিয়ে ছিলো”। (৯৭)

জার্মানীতে যেন মালামাল সহজেই আসতে পারে তার জন্য এরা তাদের আইন ও সহজ করে দেয়। অর্থ মন্ত্রী সাহেব তাদের সিমান্তে সহজ নিয়ম চালু করে দেন। তিনি হিটলারে পক্ষে এক ডিক্রি জারি করে দেনঃ “ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সিমান্তের কর্মকর্তাগন দেশে কোন দ্রব্যাদি প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়া কড়ি করতে পারবেন না”।(১০৬)

 

দাসত্ব

পূর্ব ইউরূপের প্রায় ৮ থেকে ১২ মিলিয়ন দাসকে জার্মানীর নানা কাজে লাগানো হয়। তাদেরকে মানবেতর পরিবেশে মারাত্মক কাজে নিয়োজিত করা হয়। বিশেষ করে নাজিদের অস্ত্র কারখানায় এদেরকে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। সেই কাজের কারনে অনেক শ্রমিককে দাসত্ব করতে গিয়ে প্রান দিতে হয়। (১৬১) পরিস্থিতি এমন ছিলো যে সেই সময়ে পুজিবাদিরা ও এর প্রতিবাদ করলে কারখানার মালিকেরা শ্রমিকদের চিকিৎসা করাতে অস্বীকার করে। তাদেরকে বেত পর্যন্ত পরিশোধ করা হত না ।

জার্মানীরা নাজি প্রশাসনের সময় শ্রমিকদের নিজস্ব সম্পদ পর্যন্ত লুটে নেয়। অনেক শ্রমিক যখন উক্রেইন ছেড়ে যাবার সময় তাদের সম্পদ বিক্রি করে নগদ অর্থ হাতে নিয়ে দেশ ত্যাগ করছিলেন তখন তাদের নিকট থেকে তাদের অর্থ ছিনিয়ে নেয় নাজিরা । তাদের ফসল, গবাদি পশু সব নাজিরা লুঠে নিয়ে যায় । জার্মানদের কাজ করিয়ে নেবার জন্য এরা অন্যান্য জাতির লোকদেরকে বিনা পয়সায় বা নাম মাত্র মজুরীতে কাজ করিয়ে নেয়।

জার্মানগন মোটা হয় আর অন্যরা উপোস থাকে

জার্মানী এমন নীতি প্রনয়ন ও প্রয়োগ করে যা তাদের নিজেদেরকে শক্তি শালী করে আর অন্যদেরকে বিনাশ করে দেয়। ১৯৪১ সালে এমন একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয় যাতে লিখা ছিলো, “তাঁরাই কেবল খাদ্য পাবে যারা আমাদের জন্য কাজ করবে”। তাঁরা নির্মম ভাবে “অন্য জাতিকে দমনের পথ বেচে নেয়”। জার্মানরা নিজেদের খাদ্যের প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য সব কিছু করে। ফলে অন্যান্য জাতির মধ্যে খাদ্যের তিব্র সংকট দেখা দেয়। এমন কি সেনা বাহিনীর মধ্যে ও ইহুদি সহ অন্যান্যদের খাদ্য সমস্যা দেখা দেয়। ফলে অনেকেই বাহিনী ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়ে সোভিয়েত শহরে বসবাসের জন্য আবেদন করে ।

জার্মান মন্ত্রী গোরিং ১৯৪২ সালে এক ভাষণে বলেন, আমরা আমাদের অধিকৃত দেশ সমূহের সেনাবাহিনীকে খাদ্য দিব এবং এর পরিমান বৃদ্দ্বি করব। তবে খৃস্টান সেনাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। তিনি আরো ঘোষনা করেন যে আগামীতে এরা আরো ভালো থাকবে । তাদের জন্য উর্বর ভূমি, ডিম, বাটার, ময়দার বরাদ্ব বাড়ানো হবে।

জার্মানীর “জাতিয় সমাজতন্ত্র”

নাজিরা জার্মানীকে কেন্দ্র করে বিশাল এক সাম্রাজ্যবাদের জন্ম দিতে এগিয়ে আসে। এরা সেই উদ্দেশ্য সফল করতে ইহুদি ও পূর্বাংসের লোকদেরকে গন হারে হত্যা করে। তাঁরা অন্যন্য দেশের লোকদেরকে হেলাফেলা করতে থাকে। জার্মানীরা অন্যান্য দেশের মানুষকে দাসে পরিনত করা চেষ্টা করে । হিটলার তার নিজের অপকর্মকে বৌধতা দেবার জন্য উত্তর আমেরিকার গনহত্যার উদাহরন টেনে আনেন। তার কথা ছিলো আরো জমি দখল করে জার্মানীর শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে । জার্মানীর মানুষ সুখী জীবন যাপন করতে পারবেন। এলি আরো লিখেনঃ

“ নাজিদের কথাই ছিলো আমরা আরো উপনিবেশ ও জমি চাই, জার্মানীর জায়গা বাড়াতে চাই, ইহুদিদেরকে বিলুপ্ত করতে চাই, এ সকল কাজের ভেতর দিয়ে জার্মানীর মানুষের জীবন মান আরো উন্নত করতে চাই। কেবল আভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়ে আমাদের উন্নতি হবে না”(৩১৭)

হিটলার বলেনঃ

“ যখন কোন এলাকা অস্ত্রের মাধ্যমে দখল করা হয় তখন তা সকল জার্মানীর হয়ে যায়। তাই যুদ্বের সকল প্রাপ্তি কেবল জার্মানীই ভোগ করতে পারে”।(৩০৬)

পূর্ব জার্মানীতে জনগনের পুর্বাসনের এক টি বড় লক্ষ্য ছিলো শ্রেনী বৈষম্য কমিয়ে আনা। (৩০-৩১) নাজিদের আদর্শ ছিলো জার্মানদের মধ্যে শান্তির জন্য সামাজিক অসাম্য বিদূরিত করা । হিটলার ভোল্কের জনগনের মাঝে সমাতা আনতে চেয়েছিলেন, যুদ্বের সময়ে ভোল্কের লোকেরা যুদ্বে সম ভাবে অংশ গ্রহন করেন। ১৯৪০ সালে সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেন যে, “ শ্রমিক শ্রেনীর উচিৎ সকল কাজে অংশ গ্রহন করা ‘ যা পাওয়া যাবে তা সম ভাবে বন্ঠন করে নেয় হবে’”। যুদ্বের সময়ে জার্মানীদের মাঝে সমতা কায়েম করা ছিলো একটি অন্যতম লক্ষ্য। (৩২২)

সাধারন জার্মানদেরকে যুদ্বে উতসাহিক করা নাজিদের একটি বিশেষ কাজ ছিলো। উন্নয়ন কর আদায় করে দরিদ্রদের অনুগত্য নিশ্চিত করা হয়। নিম্ন শ্রেনীর লোকদেরকে সাহায্য করা হয় ব্যাপক ভাবে। তাদের অনুগত্য উঁচু বেতন দিয়ে কেনা হয়, তাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্বি করা হয়, এবং বিলাশী দ্রব্য পন্য এদের নিকট সুলভে সরবরাহ করা হয়। একেই ভাবে শ্রমিক শ্রেনীকে ও ব্যাপক সুবিধাদি প্রদান করা হয়। তা দেখে জার্মান শ্রমিক সমিতি সমূহ এই উপকারিতার কথা প্রচারে লেগে যানঃ

“১৯৩৮ সালে আমরা আরো বেশি আত্মনিয়োগ করব বন্দুদেরকে বলব ছুটিতে ভ্রমন করা কেবল উন্নত শ্রমিকদের জন্য নয়। তা এখন সকলেই উপভোগ করতে পারবেন”। (২১)

১৯৪৩ সালে যখন যুদ্ব একেবারে তুঙ্গে, নাজিরা জার্মান জনগণকে খুবই সূখে রাখছিলো। মার্টিন বোর্ম্যান বলেন, “সাধারন মানুষের ব্যয় করার ক্ষমতা একটি অতিব গুরুত্ব পূর্ন বিষয় !” নাজিরা সাধারন মানুষের উপর থেকে সকল বোঝা তুলে দিয়ে বড় লোকদের উপর তা চাপিয়ে দিলেন।

“ ১৯৪১ সালের পর ই রাজনৈতিক ভাবে সিদ্বান্ত নিয়ে যুদ্বকালিন সময়ে ধনিক শ্রেনীর মানুষের উপর অতিরিক্ত মাত্রায় কর আরোপ করা হয়। এবং সাধারন ভোগ্যপন্যের উপর নানা ভাবে কর প্রদানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। উপরের শ্রেনীর উপর কর আরোপের কারনে কোন প্রকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়নি”।

 

সেই সময়ে যাযা করা হয়েছে তা কেবল “জাতীয় সমাজতন্ত্রের” নামেই করা হয়েছে। সামগ্রিক ভাবে নাজি প্রশাসন জার্মানীর মানুষকে আরামেই রেখছিলো। সেই পরিস্থিতিতে নাজিরা গন হত্যার মত জগন্য কাজে লিপ্ত হয়। সেই সময়ে অনেক জার্মান ও কল্যানের নামে অনেক কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করে। শ্ত্রুদের বিরুদ্বে নানা প্রকার প্রচারনায় অংশ নেয়। তাদেরকে দাসত্বে পরিনত করতে, নিপিড়ন করতে এদের বিবেকে কোন বাধাই কাজ করেনি। (৩০৯) এলি আরো লিখেন, নাজিরা মানুষকে আদর্শের চেয়ে বেশী উন্নয়নের দিকে ধাবিত করে। জার্মান সাধারন মানুষকে অনুগত রাখার জন্য “নেতৃত্বের মধ্যে” আরো বড় হবার জন্য প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করে দেয়। এরা হিটলারকে কোন প্রকার বাঁধা না দিয়ে নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েঃ

“ জার্মান জনগণ নিজেদেরকে নিস্ক্রিয় করে রাখতে ও ভাবতে অব্যস্থ হয়ে পড়ে। তাঁরা নানা রকমের সমাজ কল্যান মুলক কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। আর এর জন্য তহবীল যোগাতে থাকে ধনিক শ্রেনীর লোকেরা । সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে এক শ্রেনীর মানুষ উতলা হয়ে পড়েন”। (৩০৪)

বিশাল গ্যস্টাপো বাহিনীর জন্যই হিটলারকে প্রতিরোধ করা যায়নিঃ

“১৯৩৭ সালেই গ্যস্টাপো বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিলো ৭০০০ জন। তা ছাড়া আমলা ও সেক্রেটারী স্তরের প্রচুর লোক ও ছিলো তাদের সাথে। পুলিশের তখন তেমন কোন ক্ষমতাই ছিলো না । প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষের পক্ষে দাঁড়াবার জন্য কেহই ছিলেন না । ফলে জনগণের মাঝে এমন এক ধারনার জন্ম হয় যে, চাচা আপন প্রান বঁচা –চুপ থাকুন নইলে জেলে যাও”।

আজকের বাস্তবতাও অনেকটাই সেই রকমের চলছে। মানবতার পরাজয় ঘটাতে জার্মানীর পেছনে ছিলো হিটলার। আর প্রথম এখন তৃতীয় বিশ্বের মানুষ পরাজিত করতে কাজ করছে প্রতিদিন। সেই সময়ে ও জার্মানীর শ্রমিকেরা হিটলারের বিরুদ্বে বিপ্লবের কথা বলত। তাঁরা এখনকার প্রথম বিশ্বের শ্রমিকদের মতই বিপ্লবের প্রতিক্ষায় থাকত। নাজিরা ভেতরের দিক থেকে পয়ারজিত হয়নি, নাজিরা বাহিরের আক্রমনে পরাজিত হয়েছিলো, এরা লাল ফৌজের আক্রমনে পরাজিত হয়। জার্মান শ্রমিক শ্রেনী নাজিদের বিরুধিতায় পড়েননি বরং এরা নাজিদের উপকার ভোগী হয়ে উঠেন। তাঁরা জনগনের রক্ত শোষণে জড়িত হন। আজকের প্রথম বিশ্বের জনগণ প্রথম বিশ্বের প্রশাসকদের পক্ষে তৃতীয় বিশ্বের মানুষে বিরুদ্বে কাজ করছে। আমরা এখন আরো একটি বিশ্ব যুদ্বের মাঝ খানে দাঁড়িয়ে আছি। যে যুদ্বটি হলো প্রথম বিশ্ব বনাম তৃতীয় বিশ্ব। এই যুদ্বের খরচ ও বহন করছে তৃতীয় বিশ্বের মানুষ। যে ভাবে হিটলারকে লাল সৈনিকেরা পরাজিত করেছিলো ঠিক একেই ভাবে বিশ্ব গন লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বকে পরাজিত করতে হবে- আর সেখানে নেতৃত্ব দিবে আলোকিত সাম্যবাদিরা।

 

 

অধিবিদ্যা বনাম বস্তুবাদ

ইতিহাসের ব্যাখ্যা করবেন কেবল মহান ব্যাক্তিগন এই ধারনার সমালোচনা করেছেন কার্ল মার্ক্স। তিনি ইতিহাসের পট পরিবর্তনের জন্য মহান ব্যাক্তিদের ভূমিকাকে গুরুত্ব না দিয়ে তা বিজ্ঞানের আলোকে দেখেছেন। মার্ক্স ইতিহাসকে দেখেছেন ক্ষমতার দৃস্টিকোন থেকে। মার্ক্স ইতিহাসের বিশ্লেষণে ক্ষমতা কাঠামো, শ্রেনী, জাতীয়তা এবং লিঙ্গগত বিবেচনায় নিয়েছেন। মার্ক্স একে ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বলেছেন । এলি ঐতিহাসিক বস্তুবাদকে নাজিদের ক্ষমতা সাথে মিলিয়ে তা প্রয়োগের প্রয়াস পেয়েছেন।

“ নাজিদের ক্ষমতার ধাপটের প্রশ্ন বেশ জটিল, ফ্যাসিবাদ বিরুধীদের শ্লোগান ও নিবেদিত প্রানবাদিদের কার্যক্রম এতে এক ভিন্নমাত্রার জন্ম দেয়। জাতিয়তাবাদি সমাজতন্ত্রীদের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা উচিৎ। যদি তা কোন একটি দিকে বা এক পেশে দৃষ্টি দিয়ে দেখা হয় বা বলা হয় যে, বিশেষ কিছু দিকে মানুষ কে প্রহেলিকায় ফেলে উগ্রজাতিয়তাবাদি ভাবনার মাধ্যমে ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, জেনারেল ও এলিট কিলিং বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে তবে তা সঠিক হবে না । সামগ্রিক যুদ্বের বিষয়টিকে নাজিদের অপরাধ হিসাবে দেখলে ও হবে না” (৮)

এলির লিখায় স্পস্ট হয়েছে যে ফ্যাসিবাদ ও সামাজিক গণতন্ত্রের মধ্যে কি কি সম্পর্ক বিদ্যমান আছে। ১৯৩০ সালের কমিন্টার্নের বিষয় গুলো ও এলি ব্যাখ্যা করেছেন। এলি বুঝেই বলুন না বুঝেই বলুন তিনি কিন্তু গতানুগতিক মার্ক্সবাদি রজনী পালম দত্বের তত্ত্ব “সামাজিক ফ্যাসিবাদ” ই তুলে ধরেছেন। এটা হলো “বামপন্থার” ডগমা। সাদা চোখে নাজিবাদকে ও তার উতপত্তিকে দেখলে যা দাঁড়ায় তা হলো- নাজিরা একটি বিশেষ সামাজিক শক্তির প্রতিনিধিত্ব করেছে যার মধ্যে জার্মান শ্রমিক শ্রেনী ও যুক্ত ছিলেন। জার্মান শ্রমিকগন নাজিদেরকে সমর্থন দিয়েছিলেন। নাজিরা তাদের প্রিয় হয়ে উঠে। অনেক ক্ষেত্রে নাজিদের কাজ ও সামাজিক গনতন্ত্রীদের কাজ একাকার হয়ে যায়। তাই লেনিন জার্মান ও ফ্রান্সের সামাজিক গনতন্ত্রীদের তিব্র সমালোচনা করেন। কেননা প্রথম বিশ্ব যদ্বের কালে ওরা নিজেদের দেশের সাম্রাজ্যবাদি চক্রের সমর্থক হয়ে উঠেন। সংশোধনবাদি চক্র তাদের দেশের জনগণকে, তাদের শ্রমিকদেরকে বিশ্ব সর্বহারা শ্রেনী বিপরিতে দাড় করিয়ে দিয়েছিলো। লেনিন তাই তাদের এই নীতির বিপরিতে বিপ্লবী পরাজয়বাদের বক্তব্য হাজির করেন। লেনিন বলেন সাম্রাজ্যবাদি জারের পরাজয় তার দেশে বিপ্লবী পরিস্থিতির জন্ম দিবে । লেনিনের বিপরীতে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের রূপ ধারন করে। তাঁরা ও নামে ছিলেন সমাজতন্ত্রী। কিন্তু আসলে এরা ছিলো সাম্রাজ্যবাদি। এমন কি তাদের দলের নাম ও ছিলো “জাতীয় সমাজতান্ত্রীক জার্মান দল” । আজকের দিনে প্রথম বিশ্ববাদিরা হলেন সামাজিক সাম্রাজ্যবাদি ও ফ্যাসিবাদি শক্তি। যেমন ছিলো প্রথম বিশ্ব যদ্বে সামাজিক গণতন্ত্রী দল ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের কালে নাজি বাহিনী। প্রথম বিশ্ববাদিগন মার্ক্সবাদ, সাম্যবাদ এমন কি এরা দাবী করতে পারেন যে এরা ও তৃতীয় বিশ্ববাদি তত্ত্বে বিশ্বাস করেন কিন্তু তাঁরা ও সংখ্যা গরিস্ট মানুষের শ্রমের উপর ভাগ বসাতে চায়। প্রথম বিশ্ববাদিরা লাল পতাকাকে ধমন করতে লাল পতাকা উড়ায়। লেনিনের আগে ও আলোকিত সাম্যবাদিরাই মুলত সর্বহারা শ্রেনীর স্বার্থে কাজ করছিলো। লেনিন এসে তা ভেঙ্গে দিলেন সকল ডগমা ও কল্পনা বিলাশী ভাবনা । তাই সকলের ই বিপ্লবী বিজ্ঞানী হয়ে উঠা দরকার । আলোকিত সাম্যবাদিরাই বিপ্লবী বিজ্ঞানী ।

প্রথম বিশ্ববাদি ধারনা টি ই অবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনের ফল, এটা সামগ্রিক ভাবে ডগমা থেকে সৃষ্টি। এলি দেখিয়েছেন প্রথম বিশ্বের দেউলিয়াপনা, মিথ্যা জাত্যাভিমান ও “শ্রমিকবাদ” কেমন করে সমাজতন্ত্রের নামে বেতন বৃদ্বির প্রয়াসে লিপ্ত করে। এই “শ্রমিকবাদ” অনুসারে সকলেই কর্মজীবী হিসাবে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করে এবং সেই ভাবে শ্রেনী স্বার্থ ও সমাজতন্ত্রের ব্যাখ্যা দেয়া হয়। তাদের মতামত হলো, তৃতীয় বিশ্ব ও প্রথম বিশ্বের শ্রমিকগন একেই শ্রেনীভূক্ত। পুরো বিশ শতক জোড়েই আমরা এই ভাবনা দেখেছি। ফলে “সাম্যবাদ” কে একটি মৃত আদর্শ হিসাবে দেখা হয়েছে আর যারা নিজেদেরকে সাম্যবাদি বলেছেন তাঁরা বাস্তবতাকে একেবারেই গুরুত্ব দেন নাই। উল্লেখ্য যে র‍্যাডিকেল ইসলামিক বা জিহাদিরা ও তাদের শত্রু মিত্র বাচাই করতে গিয়ে প্রথম বিশ্বকে শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছে যা মার্ক্সবাদিরা করেনি। পক্ষান্তরে, আলোকিত সাম্যবাদিগন ঠিকই দুনিয়ার বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করেছে। তাঁরা ঐতিহাসিক দিলাদিকে বাস্তবতার আলোকে চিন্তা করেছেন; আলোকিত সাম্যবাদি গন সত্যিকার সামাজিক শক্তিকে বিবেচনা করেছেন। এরা সাম্যবাদের পেছনে বিজ্ঞানের প্রয়োগ করেছেন। ইতিহাসের নয়া দিগন্তের উন্মোচনে বিজ্ঞানকে সবার উপর তুলে ধরেছে। এলির বইটি মার্ক্সবাদের পক্ষের লোকদের জন্য একটি চমৎকার অস্ত্র। শিহাব ।